রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপীয় মিত্রদের নতুন কৌশল

রায়হান আহমেদ তপাদার:
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকটাতে দেখা গেল, ২০২০ সালের নাগোরনো-কারাবাখ যুদ্ধের শিক্ষা রাশিয়া গ্রহণ করেনি। দেখা গেল যে স্মার্ট অস্ত্র, যেমন ট্যাংকবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ও ম্যানপ্যাডস আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কৌশল কী হবে, সেটা তারা রপ্ত করতে পারেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে রুশরা যে ড্রোন ব্যবহার করেছিল, সেগুলো পুরনো ও খুব যাচ্ছেতাই ধরনের। এসব ড্রোন খুব সহজেই ভূপাতিত করে ফেলছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। রাশিয়ার শত শত সাঁজোয়া যান অ্যাম্বুশ করে ধ্বংস করেছিল ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা। পশ্চিমাদের সরবরাহ করা স্মার্ট অস্ত্রশস্ত্র ও একেবারে নিখুঁত সময়ের গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভর করে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ বাহিনীর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের শেষে ও ২০২৩ সালের শুরুর দিকে রুশ সেনাবাহিনী আধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক কৌশল রপ্ত করে নিতে থাকে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনকে রক্তাক্ত করার কৌশল নিয়েছে। ইউক্রেনের নয়টি ব্রিগেডকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় আমেরিকান ও ইউরোপীয় উপদেষ্টারা বিষয়টি সঠিকভাবে হিসাব করতে পারেননি।

ইউক্রেন যখন রক্তাক্ত হচ্ছে, তার মানে হচ্ছে ন্যাটোর সামরিক পরিকল্পনা ত্রুটিযুক্ত। ইউক্রেনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনায় সম্মত হতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সময় নিয়েছে মাত্র আট ঘণ্টা। ইইউর মানদণ্ডে সময়টা খুবই কম। আপাতদৃষ্টে ইইউর এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জয়। তবে এই জয় বহুমূল্য। সদস্যপদ প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ওরবান ইউক্রেনের জন্য ৫৫ বিলিয়ন ডলারের অনুদান ছাড়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন। আত্মরক্ষার জন্য ইউক্রেনের এই অর্থের খুবই প্রয়োজন ছিল। যুদ্ধের দ্বিতীয় বছর পূর্তির আগে সবকিছু মিলে ইউরোপ পড়েছে দোটানায়। ইইউর ইউক্রেন নীতি যে ভিত্তিগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলো হচ্ছে : ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের জয়ের সংজ্ঞা কী হবে, সে ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তাদের সিদ্ধান্ত হলো, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার হলে ধরে নিতে হবে ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। স্মরণযোগ্য, যুদ্ধের প্রথম পর্বে ইউক্রেন যত দিন পর্যন্ত না দেশটির হৃত অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারছে, তত দিন পর্যন্ত সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল মিত্ররা। ইউরোপের রাশিয়া নীতির মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলা।

ইইউতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ওরবান ভেটো দিতে পারেন, এমন আশঙ্কা ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে ইইউ কায়দা করে এড়াতে পেরেছে। কিন্তু ইউক্রেনের এই জয় যতটা না বাস্তবিক, তার চেয়ে বেশি প্রতীকী। কারণ, ইউক্রেনের যে কৌশল, তা শুরু থেকেই ছিল অবাস্তব। ধারণা করা হচ্ছিল, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হলে রাশিয়া বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, তা হয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ক্রমে কমে আসার বিষয়টি ইউরোপের স্থিতিশীলতার জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হুমকি। ইউরোপের নেতাদের বড় উদ্বেগের জায়গা হলো, ২০২৫ সালে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা। কারণ, ডানপন্থি বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে ন্যাটোকে সুপ্তাবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে।

বাইডেন প্রশাসন একসময় ইউক্রেনের সামরিক অভিযানে সমন্বয়কের ভূমিকায় থাকলেও সম্প্রতি তাদের সুর বদলেছে। অল্প কিছুদিন আগে জেলেনস্কি বাইডেনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। ওই সম্মেলনে বাইডেন নতুন একটি বাক্য ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যত দিন সম্ভব, তত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে। এর আগে তিনি বলতেন, যত দিন লাগুক, তত দিনই ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা অব্যাহত থাকবে। জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের কাছ থেকে অনুদানের ব্যাপারে সম্মতি আদায় করতে। তাতে তিনি ব্যর্থ হন। বাইডেনের এই ভাষাগত পরিবর্তনে বোঝা যায়, তিনি ইউক্রেন নিয়ে দ্বিধায় আছেন। আর এই পরিবর্তনের কারণেই ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা নতুন কৌশল গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। যদি ইউক্রেন এই যুদ্ধের পর একটি কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয় এবং ন্যাটো ও ইইউর সদস্য হতে পারে, তাহলেই তা হবে ইউক্রেনের জন্য নজরকাড়া জয়। পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত ইউক্রেনকে তাদের অভীষ্টে পৌঁছানোয় সহযোগিতা করা। ইউরোপের উচিত হবে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ও সামরিক শিল্পের সংস্কার সাধনে সহযোগিতা করা।

রাশিয়া ও ন্যাটো দুই পক্ষই গোলাবারুদের সংকটে পড়েছে। কিন্তু রাশিয়ার তুলনায় ন্যাটোর ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েলে থাকা ১৫৫ মিলিমিটার গোলার মজুদ থেকে গোলা নিচ্ছে। এটি বিপজ্জনক হতে পারে। কেননা উত্তর কোরিয়া যদি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে, তাহলে প্রতিরক্ষার জন্য সিউলের কাছে পর্যাপ্ত গোলা থাকবে না। ইসরায়েলে থাকা ৩ লাখ ১৫৫ মিলিমিটার গোলা ইউক্রেনে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও একই রকমভাবে বাজে সিদ্ধান্ত। ঘনিষ্ঠ মিত্র উত্তর কোরিয়া ও ইরানের কাছ থেকেও রাশিয়া সহযোগিতা পাচ্ছে। দুটি দেশই ১৫২ মিলিমিটার গোলা উৎপাদন করে।

ইউরোপে যদি কোনোভাবে আরও বড় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে কিংবা কোরিয়া উপদ্বীপ, চীন, তাইওয়ান, ইসরায়েলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এ সংখ্যা জানালা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার হবে। ইউক্রেন পর্যন্ত ন্যাটো সম্প্রসারিত হলে জোটটির সঙ্গী দেশগুলোর জন্য ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে ফেলবে। পরিষ্কারভাবে সুযোগ নেবে চীন ও রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়া ইউরোপে আর কোনো যুদ্ধ হবে না। এই ভবিষ্যদ্বাণী তখনই সত্যি হবে, যদি রাশিয়ার দিক থেকে আসা আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা ন্যাটোর থাকে। আসলে রাশিয়াকে প্রতিহত করার সামর্থ্য ন্যাটোর কতটা, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছেই। ন্যাটো যদি নিজের প্রতিরক্ষা পুনরুদ্ধার করতে আত্মবিশ্বাসী না হয়, তাহলে উচিত রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা। কিন্তু সেটা ইউরোপের কৌশলনীতিগত মানচিত্র বদলে দেবে। বর্তমানে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাতে করে ন্যাটো সম্প্রসারণবাদী জোট। যদিও ন্যাটো প্রতিরক্ষামূলক জোট হিসেবে গড়ে উঠেছিল।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক

raihan567@yahoo.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION